জানা গেল ২০২৫ সালের রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ

২০২৫ সালের পবিত্র রমজান মাসের শুরুর তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ মার্চ (শনিবার) প্রথম রোজা শুরু হতে পারে। তবে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে এই তারিখ একদিন এগিয়ে বা পিছিয়ে যেতে পারে।
জানা গেল ২০২৫ সালের রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ
সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, ১ মার্চ ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ভোর ৫টা ৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিট। শেষ রোজায় সেহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৩৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট।
  • রমজান মাস সম্পকে ইসলামিক তথ্য
  • জানা গেল ২০২৫ সালের রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ
  • রমজান মাসের আমল
  • রমজান মাসের নিশিধ্য কাজ এ বিষয়ে ইসলাম কি বলেছে

রমজান মাস সম্পকে ইসলামিক তথ্য

রমজান মাস ইসলামিক বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নবম মাস। এটি মুসলিমদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র মাস। রমজান মাসে মুসলিমরা সিয়াম (রোজা) রাখে, অর্থাৎ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকে। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, এবং মুসলিমদের একসাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং আত্মপরিশুদ্ধির একটি সময়।

রমজান মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
সিয়াম (রোজা): রোজা হচ্ছে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয়, মাদকদ্রব্য এবং দৈহিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার একটি ধর্মীয় আচরণ। রোজা মূলত আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।

তারাৱীহ: রমজান মাসে মুসলিমরা রাতে অতিরিক্ত নামাজ (তারাৱীহ) পড়ে। এটি সাধারণত মসজিদে জামাতে পড়া হয় এবং ইমাম-led হয়ে থাকে।

কুরআন নাযিল: রমজান মাসে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছিল। এই মাসে কুরআন তিলাওয়াত এবং তার উপর মননশীলতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হয়।

লাইলাতুল কদর: রমজান মাসে এক বিশেষ রাত থাকে, যা "লাইলাতুল কদর" নামে পরিচিত। এটি এমন একটি রাত, যাকে কুরআনে "হাজার মাসের চাইতেও শ্রেষ্ঠ" বলা হয়েছে। মুসলিমরা এই রাতে আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করে।

ঈদুল ফিতর: রমজান মাস শেষে মুসলিমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে, যা রমজানের শেষ দিনে রোজা রাখার পর আনন্দের সাথে পালন করা হয়। ঈদুল ফিতরের দিন, মুসলিমরা বিশেষ নামাজ পড়ে এবং দান-খয়রাত (যাকাতুল ফিতর) প্রদান করে।

রমজান মাস মুসলিমদের জন্য এক অনন্য সময়, যেখানে তারা নিজেদের আত্মা এবং আচরণকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

জানা গেল ২০২৫ সালের রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ

২০২৫ সালের পবিত্র রমজান মাসের শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১ মার্চ, শনিবার। বাংলাদেশে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর একদিন পর রোজা শুরু হয়। তাহলে, বাংলাদেশে রমজান শুরু হতে পারে ২ মার্চ, রবিবার। তবে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে এই তারিখ পরিবর্তিত হতে পারে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ, ২০২৫ সালের রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে। সেই অনুযায়ী, ২ মার্চ প্রথম রোজায় ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ভোর ৫টা ৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় ৬টা ২ মিনিট। শেষ রোজায় সেহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৩৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় ৬টা ১৫ মিনিট।

সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি স্থানীয় সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় ইসলামিক সংস্থার সাথে পরামর্শ করুন, কারণ ভৌগোলিক অবস্থার কারণে সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য হতে পারে।

রমজান মাসের আমল

রমজান মাস হলো ইসলামের এক বিশেষ মাস, যা সিয়াম (রোজা) পালনের জন্য পরিচিত। এই মাসে মুসলমানরা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে রোজা রাখেন এবং তার সঙ্গতিপূর্ণ আমল বা ইবাদত করে থাকেন। রমজান মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল বা ইবাদত হলো:

১. রোজা (সিয়াম) রাখা
রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা শুরু হয় সূর্যোদয়ের আগে সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে এবং সূর্যাস্তের পর ইফতার করার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। রোজার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে নিকটতা লাভ এবং আত্মসংযমের মাধ্যমে পাপের হাত থেকে বাঁচা।

২. তারাবি নামাজ
রমজান মাসে প্রতি রাতে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নাত। এটি বিশেষ করে রমজান মাসের রাতগুলোতে আদায় করা হয়।

৩. কুরআন তেলাওয়াত
রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহর কালাম প্রতিদিন বেশি পরিমাণে পড়ার মাধ্যমে নেকি অর্জন করা যায়। বিশেষ করে রমজান মাসে কুরআন খতম করা অনেকেই সাধ্যমতো চেষ্টা করে।

৪. ইতিকাফ
রমজান মাসের শেষ দশদিনে ইতিকাফ করা খুবই প্রশংসনীয়। ইতিকাফ হলো মসজিদে অবস্থান করা এবং আল্লাহর ইবাদত ও মেধা নিয়ে সময় কাটানো। এটা শুধু রমজান মাসে নয়, কিন্তু বিশেষত এই মাসে বেশি করা হয়।

৫. যাকাত দেওয়া
রমজান মাসে যাকাত দেওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত হলো ইসলামের এক পঞ্চম স্তম্ভ, এবং এটি গরীব ও অসহায়দের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হয়।

৬. দুআ ও মাগফিরাত চাওয়া
রমজান মাসে আল্লাহর কাছে দুআ করা, বিশেষ করে রাতে, অনেক বেশি কবুল হয়। এই মাসে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের গুনাহ মাফ ও তাঁর রহমত ও বরকত চাই।

৭. ইফতারি ও সাহরি
ইফতারি এবং সাহরি দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাহরি সকালে আগের দিনের রোজার আগে খাবার খাওয়া হয়, এবং ইফতার সূর্যাস্তের পর রোজা ভাঙার সময় খাবার গ্রহণ করা হয়। বিশেষভাবে ইফতারিতে দুআ করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, এবং গরীবদেরও সাহায্য করা উত্তম।

৮. সদকা ও দান
রমজান মাসে দান করা অত্যন্ত উত্তম। সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির জন্য যেকোনো ধরনের দান ও সদকা অধিক সাওয়াব অর্জনের উপায়।

৯. শবেকদর
রমজান মাসের শেষ দশদিনের মধ্যে একটি রাত, যা শবেকদর (লাইলাতুল কদর) নামে পরিচিত, বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এই রাতের দুআ অনেক বেশি কবুল হয় এবং এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
রমজান মাস আল্লাহর ইবাদতের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ, যেখানে আমরা নিজেদের আমল, তাকওয়া এবং চরিত্র সংশোধন করতে পারি।

রমজান মাসের নিশিধ্য কাজ এ বিষয়ে ইসলাম কি বলেছে

ইসলামে রমজান মাসে কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে যেগুলো প্রতিদিন রোজা অবস্থায় করা যাবে না। এই কাজগুলোর মধ্যে কিছু শারীরিক, কিছু মানসিক এবং কিছু আচরণগত বিষয় রয়েছে। রমজান মাসের রোজা পালন করার সময় মুসলমানদের কিছু নির্দিষ্ট বিধি-নিষেধ রয়েছে, এবং যদি এই কাজগুলো করা হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।

রমজান মাসের নিশিদ্ধ কাজগুলো মূলত নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. খাওয়া-পান করা:
যে কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা রোজার সময় নিষিদ্ধ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া-পান বন্ধ রাখতে হয়।

২. অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ:
রমজানে অশ্লীল কথা বলা, মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়া বা অশালীন আচরণ করা নিষিদ্ধ। যেমন: মিথ্যা কথা বলা, গালি দেওয়া, অহংকার করা, ইত্যাদি।

৩. যৌন সম্পর্ক:
রোজা অবস্থায় স্ত্রী-স্বামী সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ। সূর্যাস্তের আগে, অর্থাৎ সারা দিন যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না।

৪. মাদকের ব্যবহার:
ধূমপান বা কোনো ধরনের মাদক গ্রহণ করা রোজার মধ্যে নিষিদ্ধ। এই কাজগুলো শরীরের মধ্যে কিছু কিছু প্রকারের পদার্থ প্রবাহিত করে, যা রোজার শর্তের বিরুদ্ধে।

৫. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া বা মিথ্যা বলা:
মিথ্যা বলা, বিশেষ করে সাক্ষ্য দেয়া, এই কাজগুলো শুধু রোজার ভঙ্গকারী নয়, বরং ইসলামে হারাম।

৬. অকারণ উত্তেজনা বা রাগ:
রমজান মাসে মনের শান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রাগ বা উত্তেজনা থেকে বিরত থাকা উচিত। অসংযত আচরণও রোজার গুণগত মান কমিয়ে দেয়।

এছাড়া, শরীরিক বা মানসিকভাবে কোনও ক্ষতি করার বা মন্দ কাজ করার ফলে রোজা ভঙ্গ হতে পারে, এবং তার জন্য কাফফারা বা ফিদিয়া দিতে হতে পারে।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, যারা অসুস্থ, নারী যাদের মাসিক (ঋতুস্রাব) চলছে, বা যারা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী, তারা রোজা রাখতে বাধ্য নয়, কিন্তু তাদেরকে পরবর্তীতে রোজা রাখতে হবে বা কাফফারা দিতে হবে।

এই নিষিদ্ধ কাজগুলো এড়িয়ে চলা রোজার রক্ষা নিশ্চিত করে এবং আল্লাহর কাছে তার ইবাদত একেবারে সঠিকভাবে পৌঁছায়।

উপসংহার

রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এটি শুধুমাত্র রোজা রাখার মাস নয়, বরং আত্মবিশ্লেষণ, সচ্ছলতা, দানশীলতা, এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর ভালোবাসার মাস। রমজানে মুসলমানরা সারা দিন রোজা রাখে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য এবং সংযমের শিক্ষা দেয়। রোজা রাখার মাধ্যমে তারা নিজেদের ইবাদত ও নৈতিকতা আরও দৃঢ় করে তোলে, এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করে।

এছাড়াও, রমজান মুসলমানদের একে অপরের প্রতি দয়া এবং সাহায্যের মনোভাব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যাদের কাছে অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে, তাদের সাহায্য করার জন্য এটি একটি ভালো সময়। রমজান শেষে ঈদ-উল-ফিতরের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং উত্সাহ প্রকাশিত হয়।

অতএব, রমজান শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুশীলন নয়, এটি সমাজে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সাম্য প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url