ফাতেমা জাতের ধানে বিঘায় ফলন ৫০ মণ
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা উচ্চ ফলনশীল ধান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু অনেক ওয়েবসাইট খোঁজাখুঁজি করার পরেও জানতে পারছেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। আজকের আর্টিকেল আপনার সাথে আলোচনা করা হবে আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে।
এবং আজকের আর্টিকেলে আরো যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে সে বিষয়টি হলো। ফাতেমা জাতের ধানে বিঘা প্রতি ৫০ মন ফলন। ফাতেমা ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে আজকের আর্টিকেলটি পুরোটাই মনোযোগ সহকারে আপনাকে পড়তে হবে।
ভূমিকা
শংকর ও বেলে মাটিই ছাড়া সব মাটিতে ধান চাষের উপযোগী।এটেল ও এটেল দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য খুবই ভালো।মাটির নাইট্রোজেন ফসফরাস পটাশ জিংক সালফার ইত্যাদির মাত্রা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয়।
খাদ্যের চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রাখতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বী উদ্ভাবিত ৮৬ টি উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে বরো জাত ৩৭ টি।অথচ বরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া ধানের জাত ব্রি ২৮, ও ফ্রি ২৯ এ দুটি জাত।চীন ইন্দোনেশিয়া ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বের শীর্ষ।
জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা এফ এ ওর করা গবেষণা বলছে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাফল্য দেখিয়েছে।তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে গবেষণার মান এবং ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের তাগিদ কৃষিবিদদের।বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত।তা যোগানে ফসলের মাঠে কৃষকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম।তাদের হাড়ভাঙ্গা এই খাটুনিতেই অনন্য মর্যাদার আসুন এখন এই বাংলাদেশ।
- ধান কোন মাটিতে ভালো হয় এবং কেন?
- ধানের জাত সমূহ
- বিশ্বে ধান উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে বাংলাদেশ
- ফাতেমা জাতের ধানে বিঘায় ফলন ৫০ মণ
- আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়
ধান কোন মাটিতে ভালো হয় এবং কেন?
ধান চাষের জন্য উপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্যঃ
১। শংকর ও বেলে মাটিই ছাড়া সব মাটিতে ধান চাষের উপযোগী।এটেল ও এটেল দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য খুবই ভালো।নদ নদীর অববাহিকা ও হাওর বাওর এলাকা যেখানে পলি জমে সেখানে ধান চাষ ভালো হয়।
২। প্রকারভেদে উঁচু মাঝারি নিচু সব ধরনের জমিতেই ধানের চাষ করা যায়।যেমন নিচু জমিতে বড় ও জলি আমন চাষ করা হয়।
৩। মাটির অম্লত্ব থেকে নিরপেক্ষ অবস্থা ধান চাষের অনুকূল।
৪।মাটিতে জৈব পদার্থ কম হলে কম্পোস্ট ব্যবহার করে এর মাত্রা বাড়ানো যায়।
৫। মাটির নাইট্রোজেন ফসফরাস পটাশ জিংক সালফার ইত্যাদির মাত্রা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয়।
ধানের জাত সমূহ
খাদ্যের চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রাখতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বী উদ্ভাবিত ৮৬ টি উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে বরো জাত ৩৭ টি।অথচ বরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া ধানের জাত ব্রি ২৮, ও ফ্রি ২৯ এ দুটি জাত। এর চেয়ে উন্নত জাত উদ্ভাবিত হলেও চাষে আগ্রহী নন কৃষকরা।উন্নত জাতের ব্যবহার না বাড়ায় ধানের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়ে পড়েছে নিম্নমুখী।
১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর থেকে ২০০৫-৬ অর্থবছর পর্যন্ত গড়ে ধানের ফলন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭%।সেখানে গত ১০ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১.৭%।কৃষিবিদরা বলতেছেন বীজ উৎপাদনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোনা।তাই উন্নত বীজের জন্য কৃষকরা বিআরডিসির উপর নির্ভরশীল। গত পাঁচ অর্থবছরে দেশে বীজে চাহিদা ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ মেট্রিক টনে।
অথচ এ সময় প্রধান বীজ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরডিসির বীজ উৎপাদন ও বিতরণ কোনটাই বাড়েনি।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের কৃষি জমি কমতেছে ১% হারে।এ অবস্থায় ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উন্নত বীজ ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।পাশাপাশি বীজ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতকে আরো সম্পৃক্ত করার পরামর্শ কৃষিবিদদের।
বিশ্বে ধান উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে বাংলাদেশ
চীন ইন্দোনেশিয়া ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বের শীর্ষ।জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা এফ এ ওর করা গবেষণা বলছে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাফল্য দেখিয়েছে।তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে গবেষণার মান এবং ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের তাগিদ কৃষিবিদদের।বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত।
তা যোগানে ফসলের মাঠে কৃষকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম।তাদের হাড়ভাঙ্গা এই খাটুনিতেই অনন্য মর্যাদার আসুন এখন এই বাংলাদেশ।কুদ্দাল মামা জাতিসংঘের খাদ্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে ধানের উৎপাদন প্রবৃদ্ধ হারে বিশ্বের বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে।২০১৮ সালের গবেষণা বলছে।গেলো বছর সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী দেশ চীনের প্রবৃদ্ধির হার ছিল. ৭৮%।
ভারত ২%।ইন্দোনেশিয়া ৫ %এবং সবাইকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ ৫. ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে।বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান পরিচালক বলতেছেন বিজ্ঞানীরা এখন কেবল সাধারণ উচ্চ ফলনশীল জাতি নয় উদ্ভাবন করেছেন লবণ খাড়া সহ নানাঘাট শনশীল জাতের ধান।যেগুলো আবাদ করছেন কৃষকরা।তাই বেড়েছে ধানের উৎপাদন।
আমন আউশ ও বড় মিলে ধানের উৎপাদন তিন কোটি ৬২ লাখ টন এর বেশি।বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ধানের ৯৩ টি জাত উদ্ভাবন করেছেন।এসব উদ্ভাবিত জাত দিয়েই বাংলাদেশ ধান উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হারে শীর্ষ অবস্থান করছেন। গবেষণা বলছেন এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে দরকার কৃষকের ন্যায্যমূল্য আর গবেষণার আধুনিকায়ন।
ফাতেমা জাতের ধানে বিঘায় ফলন ৫০ মণ
একেবারে কাকতাড়ীয়ভাবে নতুন একটি ধানের বীজের আবির্ভাব ঘটেছে বাংলাদেশে।যাকে এ এ যাবৎ কালীন সর্বোচ্চ ফলনশীল ধান হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষক ইনস্টিটিউট গানটির নাম ফাতেমা।ফাতেমা নামের এই ধানের প্রতি বিঘায় ফলন পাওয়া যায় ৫০ মন।যেখানে অন্য একটি ভালো মানের হাইব্রিড জাতের ধানের চেয়ে ফলন ৪ গুণ বেশি।
পাশাপাশি এ ধান ঝড় খরা এবং লবণাক্ততা সহনীয়। গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট।যা অন্য ধরনের তুলনাই বেশি।গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না।এক একটি ধানের শীষে ৭৫০ থেকে ১০০০ টি পর্যন্ত ধান হয়।সম্প্রতি নওগার মান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক কৃষকের চাষ করা এই ধানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।চলতে মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫ মন ধান পেয়েছেন।
এ ধানের রোগ পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম।এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাত খেতেও সুস্বাদু।জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ২০১৬ সালে প্রথম এই অলরাউন্ডার চাল চাষ করেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাকার ইউনিয়নের একজন কৃষক।কয় বছর বড় মৌসুমে তার বাড়ির পাশের জমেতে হাইব্রিড আত্মা ৫ যাতে ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ তিনি দেখতে পান।
ওই তিনটি ধানের শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড়।এবং ধানের শিশে দানা পরিমাণও অনেক বেশি ছিল।ওই তিনটি ধানের শীষ বাড়িতে এনে শুকিয়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করে এই ধান চাষ শুরু করে।তিনি তার মায়ের নাম অনুসারে এই ধানের নাম রাখেন ফাতেমা ধান।
ফাতেমা জাতের এই ধান কোন জাতের এবং কোথা থেকে কিভাবে এলো এসব জানতে ইতোমধ্যে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।তাদের লক্ষ্য সারা বাংলাদেশের কৃষকদের মাঝে এই ধানের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার।
আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়
আমন শব্দের উৎপত্তি আরবি শব্দ আমান থেকে।আমান শব্দের অর্থ আমানত তত্ত্ব এমন কৃষকের কাছে একটি নিষিদ্ধ ফসল।আমন ধান মূলত দুই প্রকার।রুপা আমন এবং বন আমন।রূপা আমনে চারা অন্য জমিতে প্রস্তুত করে খেতে রোপন করে ধান উৎপাদন করাকে রূপা আমন বলে।রুপা আমান আষাঢ় মাসে বীজ তলায় বিজ বোনা হয়।শ্রাবণ ভাদ্র মাসে মৌল জমেতে বীজ রোপন করা হয়।
কার্তিক অগ্রহণ পৌষ মাসে এলাকাভিত্তিক ধান কাটা হয়।বোনা বোনা হয় হয় চৈত্র বৈশাখ মাসে।বোনা আমনের বিজ বোনা এবং অগ্রহন মাসে পাকা ধান কাটা হয।আমন ধানের ফলন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়গুলো হল।উপযোগী জাত নির্বাচন।ভালো বিজ নির্বাচন জমি তৈরি সঠিক সময়ে পোপন বা রোপন। আগাছা দূরীকরণ সার ব্যবস্থাপনা পানি ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমন মৌসুম ও এর পরিবেশ উপযোগী ৪১ টি অফ্রি ধানের জাত ও ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানারকম কৃষি তাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছে।৪১ এর মধ্যে ৩৯ টি ইমব্রিড।আর দুইটি হাইব্রিড।অনুকূল ও উপকূল পরিবেশে আমন ধানের চাষ গুলো জমি ভেদে লাগাতে হয়।
আমন ধানের ভাল ফলন পেতে করণীয় কি এই তা জানতে হলে এই আর্টিকেলটি পুরোটাই মনোযোগ সহকারে পড়ুন।কখন কি সার এবং বালাইনাশক দিতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের এই আর্টিকেলে। আমন ধানে ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক সময়ের সঠিক নিয়মে বালাই নাশক এবং নাটক ব্যবহার করতে হবে।
সুষম সার প্রয়োগ।প্রথম প্রয়গ ধান লাগানোর ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে।দ্বিতীয় প্রয়োগ ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায়।তৃতীয় প্রয়োগ ৪০ থেকে ৪২ দিনের মাথায়।এভাবে তিনবার সার প্রয়োগ করতে হবে।ধান গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে তিন টি।দৈহিক বৃদ্ধির পর্যায়ে,প্রজনন পর্যায়,পাকা পর্যায়।কোন স্তরে কতদিন থাকে ধান সে সম্পর্কে জেনে নিন।
দৈহিক বৃদ্ধি পর্যায়:
১ অঙ্কুরোদগম স্তর ২-৩দিন।
২চারা স্তর ৩০ থেকে ৪০ দিন।
৩রোপন ও পুনরুদ্ধার স্তর ৭থেকে ৮ দিন।
৪ কুশি স্তর ৪০ টাকা ৪২ দিন।
প্রজনন পর্যায়:
১ কাইচ থোড় স্তর ৫ থেকে ৭ দিন।
২ থোড় স্তর ৮ থেকে ১০ দিন।
৩ শিস বের হওয়ার স্তর ৮ থেকে ১০ দিন।
৪ ফুল অবস্থায় স্তর ৪থেকে ৫ দিন।
পাকা পর্যায়:
১দুধ অবস্থা স্তর ৮ থেকে ১০ দিন।
২ ক্ষীর অবস্থায় স্তর ৮ থেকে ১০ দিন।
৩ পরিপক্ক স্তর ১০ থেকে ১২ দিন।ধান কোন স্তরে কতদিন থাকে তা ভালোভাবে মনে রাখলে এতে করে বালাই নাশক ও সার প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আমরা ধান চাষের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম। আমি আশা করি এই অনুষ্ঠানগুলো ফলো করলে আপনারা অবশ্য উপকৃত হবেন। যদি আজকের বিষয়টি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত লোকদের সাথে শেয়ার করবন। এবং আজকের এই ধান চাষের কোন বিষয়টি আপনার কাছে ভালো লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url