বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার

 প্রেম করে হোক বা পারিবারিকভাবেই বিয়র নানা কারনেই অনেক দাম্পতির মধ্যে দেখা দেয় নানাবিধি সমস্যা। এর প্রেক্ষিতেই বিয়ের পর ডিভোর্স হয়ে যায়। আর এই প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে।তাই আজকে আমাদের আলোচনার মূল টপিক হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রতিকার।

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার
বিয়ের পর নারী পুরুষ যেমন সংসার শুরু করে। তেমনি শুরুর পরপরই অনেক সময় দেখা দেয় বিচ্ছেদের ঘন্টাধবনী।কেন হচ্ছে এই বিবাহ বিচ্ছেদ। এই বিষয়টি জানতে হলে এই আর্টিকেলটি পুরোটাই মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

বিবাহ একটি পবিত্র সম্পর্ক। এর মাধ্যমে দুটি মানুষের মধ্যে নতুন ও সুন্দর সম্পর্কের সূচনা হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়,এই সুন্দর পবিত্র সম্পর্কটা অশান্তির ঝড় হওয়ার সামনে পড়ে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াই নে পরে। কখনো সে যেতে কখনো হেরে যায়। একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগে ভেঙ্গে যাওয়াটা বড় বেদনার।

সরাসরি ভাবে দুটি মানুষের উপর এর প্রভাব তো পড়েই, আর তাদের জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মধ্যেও গভীর প্রভাব ফেলে। তার ওপর কিছু অতি ভাল মানুষের সহানুভূতি তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে ডিপ্রেশনে মধ্যে ফেলে দেয়।এই অশান্তির সূত্রপাতের অনেক কারণ থাকতে পার।সেই কারণগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হবে। তাই সেই বিষয়গুলো জানতে হলে এই আর্টিকেলটি পুরোটাই আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
  • বিবাহ বিচ্ছেদের সামাজিক কারণ
  • বিবাহ বিচ্ছেদের প্রতিকার
  • বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার
  • বিবাহ বিচ্ছেদ কেন বাড়ছে
  • বিবাহ বিচ্ছেদের প্রভাব

বিবাহ বিচ্ছেদের সামাজিক কারণ

ডিভোর্স শব্দটা শোনা মাত্রই কানের ভেতর বা মনের মধ্যে কেমন একটা ধাক্কা লাগে।মানুষ খুব আশা নিয়ে বিয়ে করে। বিয়েটা অনেক স্বপ্নের। অনেকে পছন্দ করে বিয়ে করে অনেকে সেটেল ম্যারেজ হয় বাবা-মার পছন্দে বিয়ে হয়। তা যেকোনো ধরনেরই হোক না কেন বিয়ে যে সব সময় টিকে থাকে তা কিন্তু নয়।

কিছুদিন আগে একটা পত্রিকায় দেখেছি যে ঢাকা শহরের প্রতি ঘন্টায় একটি করে ডিভোর্সের ফাইল পড়তেছে। আমার কাছে মনে হল যে এখন এটা হাই টাইম যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার। কারণে মানুষকে ডিভোর্সটা হচ্ছে। তার মধ্যে প্রধানত যে কারণটা বর্তমানে বেশি দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে। 

১ এক্সট্রা মেরেটিয়াল অ্যাফেয়ার্সঃ এইটা ডিভোর্সের জন্য যথেষ্ট বড় একটা কারণ। কারণ একটা মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করে যে একে অপরের হয়ে থাকবো এই ধরনের প্রতিজ্ঞা অপরের সাথে থাকে।একটা কমিটমেন্ট একটা কথা দেয়া একটা বিশ্বাস।বিশ্বাসের জায়গাটা যখন ভাঙ্গন ধরে এটা কিন্তু কোন কাপলের পক্ষে মেনে নেওয়া পসিবল না।

২ পারিবারিক প্রভাবঃআজকাল এটা আমরা খুব বেশি দেখছি,ডিভোর্স এর ক্ষেত্রে এক্সটেন্দেদ ফ্যামিলি মেম্বার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন তারা যখন কিছু কথা বলে এবং তারা যখন ইনফ্লুয়েন্স করে অথবা তারা যখন ডিসিশন দিতে থাকে।এটা ডিভোর্সের জন্য যথেষ্ট বড় কারণ।

৩ মাদকাসক্তঃবিবাহ বিচ্ছেদের আরেকটা মূল কারণ হচ্ছে ড্রাগস। ইদানিং ড্রাগের প্রভাবটা কিন্তু অনেক বেশি আমরা দেখতে পাচ্ছি।চারিদিকে স্কুল কলেজ সব দিকে কিন্তু ড্রাগস স্টপেজ ছড়িয়ে গেছে। এবং অফিসও কিন্তু সেটার বাইরে নয়।

৪ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনঃবিবাহ বিচ্ছেদের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন একটি বড় সমস্যা।

বিবাহ বিচ্ছেদের প্রতিকার

আজকে আমরা জানবো ডিভোর্সের প্রতিকার সম্পর্কে। বিয়ে থেকে বিচ্ছেদের উৎপত্তি।তো সে ক্ষেত্রে হচ্ছে ডিভোর্স কিন্তু আসলেই কারো কোন কাম্য নয়।সে ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তোলা অটোমেটিকে টিকিয়ে রাখাটা কিন্তু খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে আসল আমাদের কি করা উচিত। প্রথম কথা হচ্ছে বিশ্বাসটাকে স্থাপন করতে হবে।

দ্বিতীয় কথা সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আপনার পার্টনারকে ছটো না করে মনোনিবেশ করতে হবে এবং আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।যাতে করে সহযোগিতার কোন অভাবন না পড়ে। অবশ্যই আপনি যদি তার থেকে বেশি টাকা ইনকাম করেন উপার্জন করেন তাকে ছোট করার কিছু নেই।বিবাহ বিচ্ছেদের তৃতীয় প্রতিকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করা।

চতুর্থ একে অপরের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি না করা ইত্যাদি। বিবাহ বিচ্ছেদের প্রতিকারের উপাই।

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার

আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ ও তার প্রতিকার।চলুন শুরু করা যাক।মানুষের অন্য সকল সম্পর্কের মতোই বৈবাহিক সম্পর্ক এমন যা শতভাগ নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়।এমনকি তীব্র ভালোবাসা ও শান্তি সম্পর্কেও এটি আশা করা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে সফল ও গভীর বৈবাহিকের জন্য প্রয়োজন কঠর পরিশ্র দৃঢ় অঙ্গীকার এবং পারস্পারিক প্রত্যাশাকে প্রতিনিয়ত নিরক্ষণ ও মূল্যায়ন করা।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জেনে নেব বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান ও তার প্রতিকার।

১ পরিবর্তনের চেষ্টাঃঅধিকাংশ দম্পত একটি বড় সমস্যা সম্মুখীন হয় তাহলে একজন অপরজনের বিভিন্ন বিষয় অপছন্দ করে। এই অপছন্দ থেকে একজন অপরজন থেকে এমন অবস্থায় পরিবর্তন করতে চাই যার সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। পারস্পরিক এই পিরাপির ফলে একজন আরেকজনের উপর বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে।

আপনি চাইলেই আপনার সঙ্গীকে জোর করে রাতারাতি পরিবর্তন করে আপনার কাঙ্খিত নতুন মানুষের পরিণত করতে পারেন না।আপনার নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন এবং সঙ্গীর ছোট ছোট কাজকে নিজের পছন্দমত ধীরে ধীরে সহমর্মিতার সাথে পরিবর্তন করতে পারেন।

২ কথাবার্তা বনাম যোগাযোগঃবর্তমানে বৈবাহিক সম্পর্কসমূহ কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা অপর একটি বিষয় হচ্ছে। দম্পতিদের এই ভুল ধারণা যে পরস্পরের মধ্যে কথার আদান-প্রদানে যোগাযোগ।পরস্পর যখনই কথা আদায় প্রদান করে তখনই মনে করে তাদের মধ্যে যথার্থ যোগাযোগ হচ্ছে। অভিযোগ বা সমালোচনা কথার আদান প্রদান করার মাধ্যমে দম্পতির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয় না।

অভিযোগ বা সমালোচনার পরিবর্তে ইতিবাচকতার সাথে আপনার অনুভূতিকে প্রকাশন কায়দা রপ্ত করুন।

৩ সময় ব্যবস্থাপনাঃআধুনিক জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক থেকে অনেক চাপের সমন্বয়। সব চাপ সামাল দিতে গিয়ে অনেক দম্পতি হয়তো তাদের নিজেদের মধ্যে সময় দিতে ব্যর্থ হয়। প্রতিদিন পাঁচ মিনিট হলেও নিজেদের মধ্যে একান্ত কিছু সময় কাটানো প্রতিটি দম্পতির জন্য প্রয়োজন। বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এটি আবশ্যিক একটি উপকরণ।

৪ ঘনিষ্ঠতাঃসহবাস ঘনিষ্ঠদের একটি অংশ মাত্র। এটি মূলত স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার গভীরতরের সম্পর্ক।আধ্যাত্মিক মানুষের শারীরিক আবেগ গত ইত্যাদির সকল দিক থেকে পরস্পরের মধ্যে সংযোগ থাকাই মূলত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পারে ঘনিষ্ঠতার সৃষ্টি করে।এই ঘনিষ্ঠতাকে বজায় রাখতে অধিকাংশ দম্পতিকে প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হয়।

৫ পরস্পরের প্রতি লক্ষ্য রাখাঃসন্তান হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায় দেখা যায় পরস্পরের প্রতি মনোযোগ ও লক্ষ্য রাখার প্রবণতা কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। ফলে অনেক সময় হয়তো নিজেদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়।সন্তান জন্মের পরও সন্তানের পাশাপাশি পারস্পারিক মনোযোগ প্রদান সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিবাহ বিচ্ছেদ কেন বাড়ছে

বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে যে কারণে। বিবাহ বিচ্ছেদের কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো। 

১প্রত্যাশা পূরণের অভাবঃপ্রত্যেকটা ছেলে বা মেয়ের মনেই আদর্শ স্বামী বা স্ত্রী সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়ে থাকে বিয়ের আগ থেকেই। বিয়ের পর সেই ধারণার সঙ্গে বাস্তবের স্ত্রী বা স্বামীর মিল পাওয়া যায় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। সেখান থেকে তৈরি হয় প্রত্যাশা অপর্ণা তো থাকার একট হতাশা।

২ শারীরিক দুর্বলতাঃবিয়ের পরে সঙ্গীর শারীরিক দুর্বলতা প্রকাশ পেলে সেইখান থেকে সমস্যা দেখা দেয। এরেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে অন্য একটি সমস্যাও থাকে।একেবারে অপরিচিত একজন মানুষের সঙ্গে কিছু প্রাথমিক অবস্থিত থাকা একেবারে স্বাভাবিক।কিন্তু এ বিষয় নিয়ে অনেক সময় দম্পতির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে দেয়।

৩ ধৈর্যের অভাবঃবহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিয়ের পর স্বামীর অথবা স্ত্রীর কোন একটি বিশেষ অভ্যাস বা জীবনযাপনের কোন একটি দিক অন্যজনের বিরক্তকর কারণ হচ্ছে।

৪ ক্যারিয়ার নিয়ে সমস্যাঃবিয়ের পর ক্যারিয়ার আর পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব বেধে যায়। বিয়ের পর স্বামী আশা করে স্ত্রী চাকরি ছেড়ে পরিবারে সময় দেবে। স্ত্রী ও আশা করেন স্বামীর কাছে তার অফিসের থেকে বেশি প্রাধান্য দেবেন তিনি নিজে। সে আশা পূরণ না হলে দেখা দেয় সমস্যা।

বিবাহ বিচ্ছেদের প্রভাব

বিবাহ বিচ্ছেদের পরে অধিকাংশই দেখা যায়। তাদের সুখের মাত্রা অধিকারী হ্রাস পায়। অর্থনৈতিক এবং মানুষ পরিবর্তনও দেখা যায়। এটা আরও বেশি প্রভাব পড়ে যদি তাদের কোন সন্তান। আর সেই সন্তানটা যদি হয় শিশুসন্তান। বিশেষ করে শিশুদের উপর যে প্রভাবগুলো পড়ে শিক্ষাগত, আচরণগত এবং মানসিক সমস্যা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

হ্যালো বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা যা জানতে পারলাম তা হল। ভালো দাম্পত্য জীবন পেতে হলে আগে থেকে সমস্যাগুলো যাতে জীবনে হামলা করতে না পারে তেমনভাবে নিজেকে তৈরি রাখুন। আর এরপরও যদি কোন একটি সমস্যা আপনার জীবনে চলেও আসে তাহলে ভেঙ্গে না পড়ে সেগুলো প্রতিকারের রাস্তা খুঁজুন দুজনে বসে।

যাতে করে বিবাহ বিচ্ছেদের মত সমস্যায় না যেতে হয।এই আর্টিকেলটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url